ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের বিশ্বজুড়ে হিন্দুদের রক্ষাকর্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে চায়, তবে তাদের আচরণ মাঝে মাঝে দেশটির ভেতরে অন্য ধর্মাবলম্বীদের নাগরিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি অসহিষ্ণুতা দেখায়। সম্প্রতি ভারতে আজমির শরিফ নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, তা নতুন করে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। আলতাফ পারভেজ এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে, যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভারতে এবং অন্যান্য জায়গায় সংখ্যালঘুদের জন্য চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা তাঁদের জীবনকে কঠিন করে তুলেছে। এখন, ভারতে আজমির শরিফের বিষয়টি নিয়ে যে রাজনীতি শুরু হয়েছে, তা বেশ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আজমির শরিফ, যেখানে খাজা মইনুদ্দিন চিশতির মাজার অবস্থিত, দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামি ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। খাজা মইনুদ্দিন চিশতি ছিলেন একজন প্রখ্যাত সুফি সাধক, যিনি ৮০০ বছর আগে দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলাম প্রচারের জন্য এসেছিলেন। তাঁর মাজারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে আসেন, এবং এটি সমাজিক ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
কিন্তু সম্প্রতি, হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘হিন্দুসেনা’ দাবি করেছে যে, আজমির শরিফ আসলে একটি প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাঁরা ‘সংকট মোচন মহাদেব মন্দির’ নামে একটি কল্পিত নামও উত্থাপন করেছে। এটি একদিকে যেমন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, তেমনি রাজনৈতিক নেতারা এতে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছেন।
এর আগে ২০০৭ সালে, আজমির শরিফের ইফতারের সময় হামলা হয়েছিল, যা নিয়ে অনেক রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি হয়েছিল। হিন্দুসেনার মত সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত করে তুলছে। তাদের দাবি, আজমির শরিফের মতো স্থানগুলোতে মন্দিরের উপস্থিতি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, যা ধর্মীয় সমঝোতার বিপরীত।
আজমির শরিফের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজ্য রাজস্থানেও মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব অত্যন্ত কম। সেখানে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ১০% হলেও, রাজনৈতিক দিক থেকে তাদের অনেকেরই কোনো মুখপাত্র নেই। এর ফলে, হিন্দুত্ববাদী দলগুলো মুসলমানদের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক চাপ তৈরি করছে, বিশেষত স্থানীয় নির্বাচনে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব ক্ষুন্ন করার জন্য।
এছাড়া, বিজেপি সরকার ওয়াকফ বোর্ডের মাধ্যমে এই ধর্মীয় স্থানগুলোর ওপর তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। মন্দির-মসজিদ বিতর্ক এবং ওয়াকফ আইনের সংশোধনের বিষয়টি মুসলমানদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত যখন তারা জানে, এই ধরনের বিতর্ক দ্রুত রাজনৈতিক উপকারে আসতে পারে।
অতএব, আজমির শরিফ নিয়ে এই বিতর্ক শুধু একটি ধর্মীয় বিষয় নয়, বরং ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। হিন্দুত্ববাদী দলগুলো এ ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করে মুসলমানদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানকে দুর্বল করতে চাচ্ছে, যাতে তারা ভবিষ্যতে মুসলমানদের ভোটব্যাংক ধরে রাখতে পারে।
Leave a Reply